ড্রিপ ইরিগেশন কি
ড্রিপ ইরিগেশন ( Drip Irrigation ) বা বিন্দু সেচ হলো একটি নিয়ন্ত্রিত সেচ ব্যবস্থা। এই প্রক্রিয়ায় গাছের গোঁড়ায় বা শিকড়ের সন্নিকটে ফোটা ফোটা করে ধীরে ধীরে পানি দেয়া যায়, তাতে পানি কম প্রয়োজন হয়। ধীরে ধীরে ফোটায় ফোটায় পানি পড়ার কারণে একবার পানি দিলে সেই পানি ছড়িয়ে ছিটিয়ে না গিয়ে উত্তম ভাবে গাছের গোঁড়ায় বা শিকড়ের সন্নিকটে জমা হয়। শুধুমাত্র গাছের গোঁড়ায় পানি যাওয়ার কারণে গাছের চারিদিকে আগাছা কম হবে। কারণ মুল গাছটিই কেবল পানি পাবে ফলে অন্য গাছ বা আগাছা পানি না পেয়ে বাড়তে পারবে না। গবেষনা থেকে এটা জানা যায় ড্রিপ ইরিগেশন ব্যবস্থায় পানির ব্যবহার ৭৫% পর্যন্ত সাশ্রয় হয়।
কোথায় দরকার
ছাদ বা বসতবাড়ির ফল বাগানে অনেক সময় গাছের গোড়ায় পানি দ্রুত শুকিয়ে যায়। বার বার পানি দিতে হয়। এতে সময়, শ্রম এবং খরচ বেড়ে যায়। অন্যদিকে সুষম সেচের অভাবে গাছের বৃদ্ধি ও উন্নয়ন ব্যহত হওয়ায় তা থেকে কাংখিত ফলন পাওয়া যায় না। এজন্য ফল বাগানে ড্রিপ ইরিগেশন বা ড্রপ সেচ খুবই কার্যকরী এবং বিশ্বব্যাপী সমাদৃত একটি সেচ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে এক সাথে সেচ এবং সারও (লিকুইড আকারে) প্রদান করা যায়। এতে গাছের বৃদ্ধি, উন্নয়ন ও ফলন ভাল হয়।
কেন দরকার
বাংলাদেশের অনেক স্থান পানিতে ভাসছে। সেখানে চাষের জমির বড়ই অভাব। বাঙলার কৃষক সেখানে ব্যবস্থা করেছে ভাসমান শাকসবজি বাগান। দেশের বেশীর ভাগ স্থানে কৃষক সেচ ছাড়া চাষাবাদ করতে পারে না। বিশেষ করে শীতকালে সেচ বেশী প্রয়োজন হয়। শীতকালে এখন আমরা ডিপ টিউবওয়েলের উপর নির্ভর করি। নদী নালা খাল বিল শুকিয়ে যায় তাই সমস্ত নির্ভরতা চলে আসে ভূগর্ভস্থ পানির উপর। এতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমান্বয়ে নীচে যেতে থাকে। বাংলাদেশ বৈষয়িক উষ্ণতার ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আছে। আর এখন আমরা ভূগর্ভস্থ পানি কমিয়ে আরো বেশী মরুকরণের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। তাহলে উপায়। উপায় একটা আছে। পানির ব্যবহার কমানো। বিশেষ করে পাতালের পানির ব্যবহার কমিয়ে ফেলা। তা কি সম্ভব। অবশ্যই সম্ভব। ধান চাষ ছাড়া যে কোন চাষাবাদে ড্রিপ ইরিগেশন সম্ভব। ড্রিপ ইরিগশেনের মুল আইডিয়া হল যেখানে যে পরিমাণ পানি দরকার ততটুকু পানি ফোটায় ফোটায় গাছের গোঁড়ায় দেয়া। আমরা যখন ঝাঁঝরি দিয়ে পানি দেই তখন সেই পানিটা চারিদিকে ছিড়িয়ে যায়। এতে পানি অপচয় হয়। আবার যখন পাইপ দিয়ে দেই তখনো পানির অপচয় হয়। জমি ভাসিয়ে দিয়ে পানি দেয়া আরো সহজ ও পানির অপচয় তাতে অনেক অনেক বেশী হয়। যদি গাছের গোঁড়ায় ফোটা ফোটা করে ধীরে ধীরে পানি দেয়া যায় তাতে পানি কম প্রয়োজন হবে। পানি ধীরে ধীরে গাছের গোঁড়ায় পৌছিয়ে যাবে। ধীরে ধীরে ফোটায় ফোটায় পড়ার কারণে তা একবার পানি দিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে না গিয়ে উত্তম ভাবে গাছের গোঁড়ায় জমা হবে। শুধুমাত্র গাছের গোঁড়ায় পানি যাওয়ার কারণে এই গাছের চারিদিকে আগাছা কম হবে। কারণ মুল গাছটিই কেবল পানি পাবে অন্য গাছের আগাছা পানি না পেয়ে বাড়তে পারবে না। বিভিন্ন তথ্যাদি থেকে এটা জানা যায় ড্রিপ ইরিগেশন ব্যবস্থায় পানির ব্যবহার ৭৫% পর্যন্ত সাশ্রয় হয়। এতে যদি বিঘা প্রতি ডিজেলে খরচ প্রতি সিজনে তিন হাজার টাকা হয়, তবে খরচ সাশ্রয় হল ২২৫০ টাকা। তিনটি সিজনে খরচ সাশ্রয় ৬৭৫০ টাকা। পাঁচ বছরে খরচ ৩৩৭৫০ টাকা। অপরদিকে এককালীন এ ধরনের প্লাস্টিক পাইপ দিয়ে ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেমের কাঠামো তৈরি বাবদ খরচ ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশ হাজার টাকা খরচ যাবে। সম্পূর্ণ সিস্টেমের আয়ু সাত বছর ধরা হলেও মেরামত করে তা আরো পাঁচ বছর চালানো যাবে। পিভিসি পাইপ সাধারণত মরিচা পরে নষ্ট হয় না। তবে সূর্যের তাপে প্লাস্টিকের পাইপ ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকবে।