বাগান তৈরি মানুষের অতি প্রিয় এক শখ। নিজের বাড়ির এক টুকরো খালি জায়গায় নিজের পছন্দের ফুল, ফল কিংবা বাহারি গাছে মানুষ সাজিয়ে তোলে তার স্বপ্নের বাগান। প্রাচীনকাল থেকেই এই বাগান করার প্রচলন শুরু হয়। প্রথমদিকে রাজাদের উদ্যোগে এই বাগান গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে সরকারি এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় অনেক বাগান গড়ে ওঠে। পরিবারে খাদ্যের চাহিদা মেটানোর তাগিদ থেকে শুরু হয় বাগান তৈরি । কিন্তু মানুষের রুচি, সৌন্দর্য আর চাহিদার বাগান রূপ পায় আরো পরে। প্রাচীন সভ্যতাগুলোতেও পাওয়া যায় বাগানের নিদর্শন ।
দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর…’
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আজ থেকে কত বছর আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই কথাগুলো কবিতার ছলে বলে গিয়েছিলেন। প্রাক-স্বাধীনতা যুগ অর্থাৎ রবি ঠাকুরের জীবদ্দশায়, পরিবেশ এখনের মতন দূষিত ততটাও হয়ে পড়েনি । তবুও কবির সেই সময়ে দাঁড়িয়ে এই উপলব্ধি, বর্তমানে সময়ে দাঁড়িয়ে কিছুতেই অস্বীকার করা যায় না।পরিবেশের ভারসাম্য এই একবিংশ শতাব্দীতে ভীষণ রকমের ক্ষতিপ্রবণ জায়গায় দাঁড়িয়ে। ইট-কংক্রিটের হাইরাইজ বিল্ডিং, সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলা পরিবেশ দূষণ, বনাঞ্চলের একের পর এক ধ্বংস। সব মিলিয়ে মানুষ আজ প্রয়োজনীয় শুদ্ধ অক্সিজেনটুকুও পাচ্ছে না। ধূলি-ধূসরিত শহর আজ একটু সবুজের আশায় ধুঁকছে। বর্তমানে মানুষ চায় ভীষণ রকমে উদ্ভিদের সাহচর্য। কিন্তু গাছ যদি বপন না করা হয় তাহলে মানুষের সঙ্গে গাছের আত্মিকতা তৈরি হবে কী ভাবে? এই জন্যই প্রয়োজন গাছকে ভালোবাসা, গাছের যত্ন নেওয়া। আপনি যদি ভাবেন, শহুরে হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের বাসিন্দা হয়ে কি করে হাতের নাগালে গড়ে তুলবেন একটুকরো সবুজ বাগান, তাহলে ভার্টিকাল গার্ডেনিং আপনার জন্য যথার্থ।
আমাদের প্রিয় শহর ঢাকা। ইট-পাথরের কঠিন পরিবেশ। তবুও যেন এই শহরে রয়েছে অদৃশ্য এক মায়ার বাঁধন, ভালোবাসা, আন্তরিকতা। ঢাকা তার আদর মাখা কোলে আশ্রয় দিয়েছে কোটি মানুষকে। আর এই কোটি নাগরিকের ভিড়ে এই নগরে নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা মিলছে না সবুজ প্রকৃতির। তাই তো ধূলোবালি আর যানজটের শহরটিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে আমরা অফিস, বাসাসহ সব জায়গাতে খুঁজে ফিরি এক ফালি সবুজ। কিন্তু সবুজ পাই কোথায়? কারণ সবুজের জন্য ঢাকার বুকে প্রয়োজনীয় জমির বড়ই অভাব।নগরবাসীর বুক জুড়ে স্বস্তির আবেশ নিয়ে আমরা বলছি, জমি ছোট, তাতে কি? দেয়াল তো বড়। আর এই কঠিন দেয়াল হয়ে উঠতে পারে গাঢ় সবুজ। যোগান দিতে পারে আমাদের বেঁচে থাকার অক্সিজেন। কিন্তু কীভাবে?
উলম্ব বাগান
এই জাতীয় বাগান বানানোর পদ্ধতি, অন্যান্য বাগান বানানোর পদ্ধতি থেকে একদম আলাদা। এই পদ্ধতিতে, একের পর এক ধাপ করে, একটি গাছের উপরে আরেকটি গাছ রোপণ করে লম্বালম্বি ভাবে বাগান তৈরী করা হয়। একটি টবের গাছের উপর আরেকটি ছোট টবের গাছকে ঝুলিয়ে দেওয়াকেও উল্লম্ব বাগান বলা বলা যেতে পারে। বিভিন্ন ভাবে উল্লম্ব বাগান তৈরী করা যায়। ঘরের প্লাস্টিকের র্যাকে যদি মাটি ভরে লতানো গাছের চারা লাগানো যায়, দেখতে দেখতে তাও উল্লম্ব বাগানের রূপ নেবে। জানলার গ্রিলেও টবের উপর টব সাজিয়ে উলম্ব বাগান বানিয়ে তোলা যায়।
দেয়াল পছন্দ
আমাদের এই বাগান প্রস্তুত করতে প্রথমেই পছন্দ করতে হবে নিজেদের সুবিধামতো একটা দেওয়াল। যেকোনো গাছ আপনি এতেই লাগাতে পারেন। তবে একটা কথা মাথায় রাখবেন যে দেওয়াল আপনি পছন্দ করবেন সেটা যেন প্রয়োজনমতো পানি, বাতাস পায়। উল্লম্ব উদ্যান গড়ে তোলার জন্য, রোদ এবং ছায়ার সঠিক সংমিশ্রণ প্রয়োজন।
ভার্টিকাল বাগান বানানোর নিয়মঃ-
ছাদে বা বারান্দায় যেখানে দিনে অন্তত ৪-৫ ঘন্টা আলো পৌছয়, সেসব জায়গায় চাইলেই ফল বা শাক সবজি লাগিয়ে খুব সহজেই ভ্যাটিকাল গার্ডেন গোড়ে তোলা যায়।
বিশেষত শীতকালীন ফুল যেমন পিটুনিয়া, প্যানসি, ভার্বেনা, ডায়ানথাস, অ্যাষ্টার, ফ্লক্স, স্যালভিয়া বা সারা বছর ফোটে, এমন ফুল যেমন, মর্নিং গ্লোরি, চাইনিজ টগর, টাইম ফুল (Portulaca) বোগেনিয়া, অ্যান্থুরিয়াম ইত্যাদি দিয়েও খুব সুন্দরভাবে তৈরী করা যায় ‘ভার্টিকাল বাগান’।
এছাড়াও বিভিন্ন শাকসবজি যেমন, পার্সলে বা মৌরি, পুদিনা, টমেটোলেটুস, ব্রকোলি, লালশাক, পালংশাক, ফরাস বিনস, লঙ্কা, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি দিয়েও ‘ভার্টিকাল বাগান’ বানানো যায়। এতে যেমন পরিবারের সদস্যদের প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়, তেমনি বাহারি রঙ-বেরঙের সবজি মনের মধ্যে এক অনাবিল স্ফূর্তির সঞ্চার করে।
ঘরের ভিতর, লিভিং রুম বা অফিসেও চাইলে ছায়াবান্ধব পাতাবাহারি গাছ যেমন। মানিপ্ল্যান্ট, অ্যালোকেশিয়া, ফার্ন, স্পাইডার লিলি, অ্যান্থুরিয়াম, বোটলিলি, ড্রাসিনা, মনষ্টেরা, রিও , বাল্বস: (টিউলিপ, নারিসিসাস, হায়াসিন্থ ইত্যাদি), ছোট ফুল: জেরানিয়ামস, পেটুনিয়াস, সাইক্ল্যামেন প্রভৃতি গাছ দিয়ে ভার্টিক্যাল গার্ডেন বানিয়ে ভিতরের দেওয়ালগুলিকে নান্দনিকভাবে সাজিয়ে তোলা যায়।
মাটি
উল্লম্ব বাগানের মাটির উর্বর হওয়া ভীষণ ভাবে দরকার। তবে উল্লম্ব বাগানে মাটির পরিবর্তে অর্ধেক কম্পোষ্ট ও অর্ধেক কোকোডাষ্ট মিশ্রণে গ্রোয়িং মিডিয়াও তৈরি করে নেওয়া যায়।
পানি সরবরাহ
উল্লম্ব বাগানে রোপণ করা গাছের পাত্রগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আকারে ছোট হয়। ফলে পানি ধরার পরিমাণও এদের কম থাকে। দরকার অনুযায়ী উল্লম্ব বাগানে তাই পানি সরবরাহ করা উচিত। উল্লম্ব বাগান বানানোর পাত্র চয়নে সাবধানতা মেনে চললে ভালো। যদি বড় আকারের উল্লম্ব বাগান বানাতে হয়, তাহলে স্বয়ংক্রিয় বিন্দু সেচ (Drip Irrigation) পদ্ধতিতে টাইমার সেট করে পানি সরবরাহ করতে হবে।
দেয়াল বাগান নিয়ে যেকোন জিজ্ঞাসা থাকলে আমদেরকে জানান।
Feel free to call us anytime
WhatsApp available
+8801919751842
+8801919751841
+8801919751840
For details
#agriculturist_faridul_hasan