ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করে ড্রিপ ইরিগেশন।
আসসালামু আলাইকুম আশা করি সবাই ভালো আছেন। কিভাবে ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করে ড্রিপ ইরিগেশন সেটাপ করা যায় সে বিষয় নিয়ে কথা বলব।আমার আজকের লেখা টি মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার চরতিল্লি ইউনিয়নের মতির মোড়ের একটি প্রজেক্ট নিয়ে। চর তিল্লি গ্রামটি ধলেশ্বর নদীর তীরে অবস্থিত। আমরা সবাই জানি নদীর চরে মরুভূমির মত বালু থাকে। এই মরুভূমির মত বালুতে ড্রিপ ইরিগেশন সেটাপ করে যদি ফসল ফলানো যায় তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে বলেন তো?আশা করি ভালোই হবে।আমরা সবাই কম বেশি British American Tobacco Bangladesh কোম্পানির নাম শুনেছি। তো এই British American Tobacco Bangladesh মরুভূমির মত বালুর চরে তামাকের মত অর্থকারী ফসল চাষ করছে। চাষ করার পরে তাদের ভাবনা ছিল কি ভাবে বালু মাটিতে সেচ দেওয়া যায় এবং পানির অপচয় রোধ করা যায়। আমরা জানি আজ সারা বিশ্বে পানির সংকট। পানির অপচয় রোধ করে কিভাবে উন্নত মানের সেচ দেওয়া যায়। এটা নিয়ে তাদের চিন্তার শেষ ছিল না। অনলাইন সার্চ করে ড্রিপ ইরিগেশন বিডি নামক একটি কোম্পানি খুজে পান। এবং British American Tobacco Bangladesh এর একজন অফিসার জনাব সাইমুম ড্রিপ ইরিগেশন বিডির সাথে যোগাযোগ করেন।যোগাযোগের এক পর্যায়ে ড্রিপ ইরিগেশন বিডির টিমের সাথে কথা বলেন। এবং ড্রিপ ইরিগেশন সেটাপের বিষয়ে আলোচনা করেন। এবং তাদের প্রজেক্টি ভিজিট করার জন্য আমন্ত্রণ করেন। এরপরে ড্রিপ ইরিগেশন বিডির ইঞ্জিনিয়ার টেকনিশিয়ান এবং কৃষিবিদ প্রজেক্টি ভিজিট করেন।এবং মেজারমেন্ট করেন।মেজারমেন্ট শেষে একটি বাজেট দেন।প্রজেক্টির আয়তন ছিল ৫৫ শতাংশ। ৫৫ শতাংশ জমিতে সারি করে তামাকের গাছ গুলি লাগানো হয়েছিল। মোট ১২০ টির মত সারি ছিল। প্রতিটি সারির দুরত্ব ছিল, ১৩০ ফিট করে। গাছ থেকে গাছের দুরত্ব ১.৫ ফিট। মোট প্রায় ৪৫০০ গাছ ছিল।ড্রিপ ইরিগেশন এর বাজেট পাওয়ার পরে তারা কাজটি সম্পন্ন করার জন্য অনুমোদন দেন।
ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করে ড্রিপ ইরিগেশন সেটাপ পদ্ধতি ঃ সেটাপের শুরুতে বলে রাখি যে অন্য সব ড্রিপ ইরিগেশন এর চেয়ে এই প্রজেক্টের ইরিগেশন টি একটু ভিন্ন। এই প্রজেক্টে কোন ধরনের বৈদ্যুতিক সোর্স না থাকার কারণে এখানে একটি ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে এবং পানির উৎস হিসাবে নদীর পানি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রজেক্ট থেকে নদীর দুরত্ব ছিল ২০০ ফিটের মত সবকিছুর চ্যালেঞ্জ নিয়ে ড্রিপ ইরিগেশন এর অভিজ্ঞ টিম কাজ টি করেছে। প্রথমে আমরা ৪ ঘোড়া শক্তি সম্পন্ন একটি ডিজেল ইঞ্জিন হুস পাইপের সাথে নদীর তীরে স্থাপন করেছি। হুস পাইপের অপর প্রান্তে একটি চেকভাল্ব লাগিয়ে ফ্লোটিং সাপোর্ট এর৷ মাধ্যমে নদীর তে দিয়েছি। নদীর পানিতে অনেক প্রকারের ময়লা বা বালু কনা থাকে এজন্য অতিরিক্ত ভাবে একটি ২০০ লিটার এর ড্রাম দিয়ে ফিল্টারিং করা হয়েছে। ডিজেল ইঞ্জিন এর ডেলিভারি প্রান্তে ২টি ২ ইঞ্চি সাইজের স্কিন ফিল্টার ব্যবহার করা হয়েছে। যাতে কোন প্রকারের বালু কনা ড্রিপ লাইনে যেতে না পারে। পানি পরিমাপ করার জন্য একটি ওয়াটার সাপ্লাই মিটার ব্যবহার করা হয়েছে। ফিল্টার এর ডেলিভারি থেকে ২ ইঞ্চি মেইন লাইন নিয়ে প্রজেক্ট সেটাপ করা হয়েছে। মেইন লাইন থেকে ১৬ মিলি ছিদ্র করে রাবার ওয়াসার সেট করা হয়েছে এবং ১৬ মিলি কানেক্ট সেটাপ করা হয়েছে। ১৬ মিলি পাইপ কে ১৬ মিলি কানেক্টর এর সাথে সেট করা হয়েছে। এবং প্রতিটি সারি তে বিছিয়ে দিয়েছি।তার পরে ১৬ মিল পাইপ কে পান্স করে প্রতিটি গাছের গোড়ায় একটি করে প্রেশার- কমপ্রেশার ড্রিপার বসিয়ে দিয়েছি। যেটা ঘন্টায় ২ লিটার পানি ডেলিভারি করে। এভাবে প্রতিটি গাছের গোড়ায় সমান ভাবে পানি যাবে।
মালামাল এর বিবরণ ঃ এই প্রজেক্টে একটি ৪ ঘোড়া শক্তি সম্পন্ন ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। নদী থেকে পানি উঠানোর জন্য হুস পাইপ ব্যবহার হয়েছে মেইন লাইনের জন্য ২ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ ব্যবহার হয়েছে স্কিন ফিল্টার ব্যবহার হয়েছে ১৬ মিলি পাইপ ব্যবহার হয়েছে বাইপাস কানেক্টর ব্যবহার হয়েছে এছাড়া প্রেশার – কম প্রেশার ব্যবহার হয়েছে।।
ফলাফল ঃ আল্লাহর অশেষ রহমতে এই প্রজেক্টটি ড্রিপ ইরিগেশন বিডির টিম সুন্দর ভাবে শেষ করতে পেরেছে এবং প্রজেক্টটি সুন্দর ভাবে চালানো সম্ভব হয়েছে।
সকলকে ধন্যবাদ।