বাংলাদেশের অনেক স্থান পানিতে ভাসছে। সেখানে চাষের জমির বড়ই অভাব। বাঙলার কৃষক সেখানে ব্যবস্থা করেছে ভাসমান শাকসবজি বাগান। দেশের বেশীর ভাগ স্থানে কৃষক সেচ ছাড়া চাষাবাদ করতে পারে না। বিশেষ করে শীতকালে সেচ বেশী প্রয়োজন হয়। শীতকালে এখন আমরা ডিপ টিউবওয়েলের উপর নির্ভর করি। নদী নালা খাল বিল শুকিয়ে যায় তাই সমস্ত নির্ভরতা চলে আসে ভূগর্ভস্থ পানির উপর। এতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমান্বয়ে নীচে যেতে থাকে। বাংলাদেশ বৈষয়িক উষ্ণতার ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আছে। আর এখন আমরা ভূগর্ভস্থ পানি কমিয়ে আরো বেশী মরুকরণের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। তাহলে উপায়। উপায় একটা আছে। পানির ব্যবহার কমানো। বিশেষ করে পাতালের পানির ব্যবহার কমিয়ে ফেলা। তা কি সম্ভব। অবশ্যই সম্ভব। ধান চাষ ছাড়া যে কোন চাষাবাদে ড্রিপ ইরিগেশন সম্ভব। ড্রিপ ইরিগশেনের মুল আইডিয়া হল যেখানে যে পরিমাণ পানি দরকার ততটুকু পানি ফোটায় ফোটায় গাছের গোঁড়ায় দেয়া। আমরা যখন ঝাঁঝরি দিয়ে পানি দেই তখন সেই পানিটা চারিদিকে ছিড়িয়ে যায়। এতে পানি অপচয় হয়। আবার যখন পাইপ দিয়ে দেই তখনো পানির অপচয় হয়। জমি ভাসিয়ে দিয়ে পানি দেয়া আরো সহজ ও পানির অপচয় তাতে অনেক অনেক বেশী হয়। যদি গাছের গোঁড়ায় ফোটা ফোটা করে ধীরে ধীরে পানি দেয়া যায় তাতে পানি কম প্রয়োজন হবে। পানি ধীরে ধীরে গাছের গোঁড়ায় পৌছিয়ে যাবে। ধীরে ধীরে ফোটায় ফোটায় পড়ার কারণে তা একবার পানি দিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে না গিয়ে উত্তম ভাবে গাছের গোঁড়ায় জমা হবে। শুধুমাত্র গাছের গোঁড়ায় পানি যাওয়ার কারণে এই গাছের চারিদিকে আগাছা কম হবে। কারণ মুল গাছটিই কেবল পানি পাবে অন্য গাছের আগাছা পানি না পেয়ে বাড়তে পারবে না। বিভিন্ন তথ্যাদি থেকে এটা জানা যায় ড্রিপ ইরিগেশন ব্যবস্থায় পানির ব্যবহার ৭৫% পর্যন্ত সাশ্রয় হয়। এতে যদি বিঘা প্রতি ডিজেলে খরচ প্রতি সিজনে তিন হাজার টাকা হয়, তবে খরচ সাশ্রয় হল ২২৫০ টাকা। তিনটি সিজনে খরচ সাশ্রয় ৬৭৫০ টাকা। পাঁচ বছরে খরচ ৩৩৭৫০ টাকা। অপরদিকে এককালীন এ ধরনের প্লাস্টিক পাইপ দিয়ে ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেমের কাঠামো তৈরি বাবদ খরচ বিশ থেকে বাইশ হাজার টাকা খরচ যাবে। সম্পূর্ণ সিস্টেমের আয়ু পাঁচ বছর ধরা হলেও মেরামত করে তা আরো পাঁচ বছর চালানো যাবে। পিভিসি পাইপ সাধারণত মরিচা পরে নষ্ট হয় না। তবে সূর্যের তাপে প্লাস্টিকের পাইপ ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকবে।
ড্রিপ ইরিগেশন ( Drip Irrigation ) সিস্টেমে পাহাড়ের ঢালে অপচয় ছাড়াও সহজে সেচ দেয়া যায়। এর জন্য পাহাড় সমান করার প্রয়োজন নেই। পাহাড়ের উপর পানি তোলা কষ্টও শ্রমসাধ্য বিধায় সেচে অল্প পানি ব্যবহার করার কারণে পাহাড়ের চাষে ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম সার্বিকভাবে খরচ অনেক কমে যায়। এক বিঘা জমিতে ৩৬৫ দিনের মধ্যে যদি ১০০ দিন ৩০০ টাকা করে পানির লেবারে খরচ হলে বছরে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ আর পাঁচ বছরে ১ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ হবে। আবার বেশী পানি দিয়ে অতিরিক্ত ঘাস হওয়ার জন্য ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১০ দিনে অন্তত একজন লেবারে খরচ ৩৬ গুনন ৩০০ টাকা অর্থাৎ ১০৮০০ টাকা। আর পাঁচ বছরে খরচ ৫৪ হাজার টাকা। পাঁচ বছরে শুধু লেবার থেকে সাশ্রয় দই লক্ষ টাকা। এখন সোলার ব্যবহার করলে পরিবেশ গত আরেক লাভ হবে। কম পানি ব্যবহার মানে কম বিদ্যুৎ ব্যবহার আর কম বিদ্যুৎ ব্যবহার মানে কার্বন নি:স্মরন কমানো। অপরদিকে ছোট ছোট সোলার পাম্প দিয়ে ভালভাবে ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম চালানো যায়। মরুভূমিতে চাষাবাদের জন্য ড্রিপ ইরিগেশন খুবই আদর্শ একটি পদ্ধতি। ভারতে রাজস্থান ও গুজরাটে সোলার ড্রিপ সিস্টেম বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাংলাদেশে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে বাংলাদেশে এনে ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম বাজার জাত করছে। তাদের দ্রব্যাদির দাম অনেক বেশী। সাধারণত সৌখিন টবের বাগান যারা করেন বা ছাদে বাগান করেন তারা ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম সহজে ব্যবহার করতে পারেন। ঢাকার পার্টিগুলো দিয়ে আপনি সহজেই ড্রিপ ইরিগেশন করে নিতে পারেন। আপনাকে কিছু করতে হবে না। পেশাদারদের চুক্তি দিলেই হল তারাই সব করে দিবে। যাদের জমি বেশী তাড়া জমি দেড় হতে দুই ফিট অন্তর ৩/৪ ইঞ্চি পিভিসি পাইপ জমিতে ছড়িয়ে দিতে হবে। তার পর এক দেড় ফুট দুরে দূরে ফোটায় ফোটায় পানি পড়ার জন্য ছিদ্র করে নিলেই হল। আর মাঠের এক কোনে ১০০০ লিটারের প্লাস্টিক ট্যাংক ছয় ফুট উচ্চতায় মাচার উপর বসিয়ে দিলেই কাজ হয়ে যাবে। তারপর সময় মত ট্যাপ খোলা বন্ধ করলেই হবে। এছাড়া সময় নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বসিয়ে সেচের নিয়ন্ত্রন করা যাবে। আবার আর্দ্রতা সেন্সর বসিয়ে পুরো জমিটি সেচ ব্যবস্থা অটোমেটিক করা যায়। যখন গাছের গোঁড়ায় পানির আর্দ্রতা কমে যাবে তখন সেন্সর সেচ চালু করে দিবে আবার সেচ সঠিক মাত্রায় হলে ও পানির আর্দ্রতা সঠিক হলে সেচ বন্ধ হয়ে যাবে। এভাবে পানির ব্যবহার আরো মিতব্যায়ীতার সাথে ও কায়িক পরিশ্রম ছাড়া করা সম্ভব।
এটা গ্রামের মহিলাদের খুবই উপকারে আসবে। গ্রামের মহিলারা দিনের শেষে পুকুর ডোবা থেকে পানি তুলে তুলে তাদের ঘরের আসে পাশে লাগানো সবজি ক্ষেতে পানি দেয়ার পরিশ্রম ও সময় থেকে তারা মুক্তি পাবে এবং তাদের দিনের হিসাবে কিছুটা সময় বিশ্রামে যোগ হবে।
বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশই ড্রিপ ইরিগেশনের মাধ্যমে সাশ্রয়ী ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন প্রয়োজন বাংলাদেশের চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা। বাংলাদেশে যে কোন লাভজনক পদ্ধতি দেখাতে পারলেই হল। তা বাস্তবায়ন করতে মোটেই সময় লাগবে না। কারণ বাংলাদেশের অনেক এনজিও বাড়ী বাড়ী ঘুরে বেড়াচ্ছে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়ার জন্য। আমাদের প্রয়োজন প্রযুক্তিটি গ্রামে গ্রামে মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া।
1 thought on “ড্রিপ( Drip Irrigation ) ইরিগেশন সিস্টেম”