ড্রিপ
ইরিগেশন কি?
ড্রিপ
ইরিগেশন ইংরেজি শব্দের আবেধানিক অর্থ হচ্ছে বিন্দু
বিন্দু জলের সেচ ।
গাছের মূলে
সঠিক
পরিমানে বিন্দু বিন্দু পানি দেয়াকেই ড্রিপ
ইরিগেশন বলে । ড্রিপ
ইরিগেশনের মাধ্যমে শাক–সবজি , ফুল–ফলমূল তথা সকল ধরনের
ফসল আবাদ করা যায়
। সব ধরনের ছাদ
বাগান , মাটি তথা মরুভুমিতেও
ড্রিপ ইরিগেশনের মাধ্যমে চাষাবাদ খুব সহজেই করাযায়
যাকিনা প্রচলিত চাষাবাদ থেকে অনেক উন্নত
ও লাভজনক । ড্রিপ ইরিগেশনের
টুলসের দামও সাধারন কৃষকের
হাতের নাগালে ।
ড্রিপ
ইরিগেশন বড় , মাঝারি , ছোটো
কিম্বা ছাদবাগানের সব পরিসরের চাশাবাদের
জন্যই আধুনিক
বিজ্ঞানের এক উন্নত কৌশল
। যা সনাতন কৃষি
থেকে সবদিক থেকেই বহুগুনে লাভজনক। এক কথায় চাষাবাদের
সেচের জন্য বিজ্ঞানের
আধুনিক কৌশল ।
ইরিগেশনের কয়েকটি ধরনের মধ্যে বাংলাদেশে জনপ্রিয় ৩টি ধরন হচ্ছে
ড্রিপ ইরিগেশন , স্প্রিঙ্কলার
ইরিগেশন , ফগার ইরিগেশন ।
ড্রিপ
ইরিগেশনের মাধ্যমে টমেটো , মরিচ , চাপ্সিকাম , ঢ্যাঁড়শ , ইস্ট্রবেরি , মিষ্টিকুমড়া , লাউ,
ফুল–ফল ইত্যাদি
সেচ দেয়া হয়।স্প্রিঙ্কলার ইরিগেশনের
মাধ্যমে সবজি চাষে সেচ
দেয়া হয় । ফগার
ইরিগেশনের মাধ্যমে মাশরুম , ক্যাকটাস , লন , হাইড্রফনিক পদ্ধতিতে
ঘাস চাষে ইত্যাদি সেচ
দেয়া হয়।
১৯৬০
সালে পলিশ ইয্রায়েলি ইঞ্জিনিয়ার
ড্রিপ ইরিগেশনকে আধুনিক রুপ দেয় ।
এর পর থেকেই ইজরাইলে
ড্রিপ ইরিগেশনের মাধ্যমে মরুভূমিতেই চাশাবাদকে আধুনিক ও যুগসম্মত ভাবে
রুপায়ন করা হয় ।
খুব দ্রুত ইউরপিয়ান দেশগুলোর চাশাবাদের সেচ ব্যাবস্থা ড্রিপ
ইরিগেশনের ব্যবহার উল্লেকযোগ্য হাড়ে বাড়তে থাকে
। চিন,
ভারত, রাশিয়া, যে সব দেশে
বড় বড় নদীর অভাব
নেই, তারাই এখন চাষ শিখতে
আসে এই মরুভূমির দেশে।
১৯৯৯
থেকে ২০০৯, এই এক দশকে
ইজরায়েলে চাষিরা জলের ব্যবহার ১২
শতাংশ কমিয়েছেন, ফলন বাড়িয়েছেন ২৬
শতাংশ। সেই সঙ্গে লেবারের
প্রয়োজনও কমেছে। চাষির সংখ্যা সাড়ে ২৩ হাজার থেকে
কমে এখন ১৭ হাজার।
জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশ চাষ
করে, তাতেই গোটা দেশের খাবারের
চাহিদার ৯৫ শতাংশ মিটে
যায়, আবার ফল, সবজি,
রফতানিও হয় ইউরোপের নানা
দেশে।
ড্রিপ
ইরিগেশনের মাধ্যমে সব ধরনের ফসলের
, সব ধরনের মাটিতে ও ছাদবাগানে সেচ
দেয়া যায় ।
সনাতনী
পদ্ধতির চাইতে সঠিক সময়ে সঠিক
পরিমানে বিনা শ্রমে খুব
অল্প খরচে অধিক লাভে
ফসলের
জমিতে
বা ছাদের বাগানে ড্রিপ ইরিগেশনের মাধ্যমে সেচ দেয়া যায় এবং
ড্রিপ ইরিগেশনের ভূমিকা অপরিসীম ।
ড্রিপ
ইরিগেশনের উপকারিতা ঃ
১। ড্রিপ ইরিগেশন পদ্বতিতে চাষের জমি সেচ দিলে
বা ছাদবাগানে সেচ দিলে ৭০%
সেচের পানি সাশ্রয় হয়।
ডিজেল ও বিদ্যুৎ এর
যে আকাশচুম্বী দাম এবং বিদ্যুৎতের
অনিশ্চয়তার কারণে সেচ খরচ বাঁচানোর
জন্য ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম স্থাপন করা সময়ের দাবি।
২। ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেমে যেহেতু অটোমেটিক ভাবে প্রতিটি গাছের
গোড়ায় পানি চলে যায়,
তাই সেখানে কোন শ্রমিকের দরকার
হয় না।এটি অটোমেটিক কন্ট্রোলার এর মাধ্যমে বিকাল
বা সন্ধায় প্রয়োজনমত সময় সেটিং করে
গাছে পানি দেওয়া যায়।
৩। ড্রিপ ইরিগেশনের মাধ্যমে আগাছা জন্মায় অনেক কম। কারণ
পানি ফোটায় ফোটায় শুধু গাছের গোড়ায়
পড়ে, বিধায় অন্য জায়গাগুলোর মাটিতে
সার ও জ্বো না
থাকায় আগাছা জন্মাতে পারে না ।
এই জন্য আগাছা দমনে কিটনাশক
কম ও শ্রমিকের প্রয়োজন
খুব কম হয় ।
তবে চাষের জমি মালচিং করে
নিলে আগাছা দমনে কোন ধরনের
কিটনাশক বা শ্রমিকের প্রয়োজন
হয় না।
৪। ড্রিপ ইরিগেশনে ৫০% সার কম
লাগে, কারন ড্রিপ ইরিগেশনে
প্রয়োজনীয় সার রিজার্ভ ট্যাংকিতে
দিলে প্রতিটি গাছের গোড়ায় চলে যায় , যার
কারনে সার অপচয় হয়
না। তবে আবশ্যই সারগুলো
পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
৫। ড্রিপ
ইরিগেশনে ২৫–৩০% চাষকৃত
ফসলের উৎপাদন বেশী হয় ।
বাংলাদেশের
প্রেক্ষাপটে ড্রিপ ইরিগেশনে প্রয়োজনীয়তা ও বর্তমান বাস্তবতা
ঃ
বাংলাদেশে
৯৬% মিঠা পানি ব্যবহার
হয় কৃষি কাজে সনাতনী
সেচ বাবস্থার কারণে । এর মধ্যে
৯২% পানি ব্যবহার হয়
ভূগর্ভের ।অপরিকল্পিত ভাবে গাছপালা ও
বনায়ন ধ্বংসের কারণে এবং নদ–নদি
, খাল–বিল ভরাট করার
কারণে আগের মতো বৃষ্টি
না হয়াতে কৃষি কাজে প্রায়
১০০% ভাগই ব্যবহার হচ্ছে
ভূগর্ভের পানি। এর ফলে আমাদের
জল সম্পদ খুব দ্রুত কমতে
শুরু করেছে ।বর্তমানে ঢাকায় ভূগর্ভে প্রতিবছর ২–৩ মিটার
পানি শুন্য হয়ে যাচ্ছে ।
এ জন্য ঢাকা প্রতি
বছর আধা ইঞ্চি করে
দেবে যাচ্ছে । বাংলাদেশের
কিছু বরেণ্য অঞ্চলে পানির এতটাই অভাব যে সেখানে
কৃষি কাজের জন্য পানি কিনে
ব্যবহার করতে হয়। আমরা
এখনি যদি পানির অপচয়
রোধ করতে নাপারি একইসাথে
পানির সঠিক ব্যবহার না
করি এবং ভূগর্ভের পানি
শুন্য স্থানে পুনরায় পানি পুরন না
করি তাহলে ঢাকা ভূমিধ্বসে
পতিত হবে খুবই শিগ্র
। অন্যান্য দেশ গুলতে তাদের
ভূগর্ভেরে পানি শুন্যতা পুরনে
বেশ কিছু
প্রশংশিও
পদক্ষেপ গ্রহন করে , যেমন নেপাল ।
সুতরাং এখন থেকেই আমাদের
পরিবেসের কথা চিন্তা করে
পানির সঠিক ব্যবহার করা
উচিৎ ।
ড্রিপ
ইরিগেশন পদ্ধতিতে বর্তমানে বাংলাদেশে জমিতে বা ছাদবাগানে পানি
সেচ দেয়া শুরু হয়েছে।
যা পরিবেশগত দিক থেকে ও
কৃষক তথা সব কিছুর
জন্যই যুগগোপোজি মানানসই লাভজনক।
বিজ্ঞান
ড্রিপ ইরিগেশনের আমাদের কম সময়ে অল্প
শ্রমে অর্থ বাঁচিয়ে ফলন
বৃদ্ধির দ্বারা আমাদের কৃষিকে অনেক সমৃদ্ধশালী করেছে