বানিজ্যিক ড্রাগন চাষে ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম

ড্রাগন মূলত একটি ক্যাকটাস জাতীয় গাছ। এই গাছের কেন পাতা নেই। এটি সাধারণত লম্বা আকৃতির হয়ে থাকে।আমাদের দেশে ড্রাগন একটি জনপ্রিয় ফল হিসাবে পরিচিত। এটি দেখতে যেমন সুন্দর খেতে ও অনেক মিষ্টি। আমাদের দেশে এখন ড্রাগনের বিভিন্ন জাত রয়েছে। ড্রাগনের প্রতিটি জাতই উচ্চ ফলনশীল। ড্রাগন ক্যাকটাস জাতীয় হওয়ার ফলে এটি গরম বা শীত অনুভব করতে পারে না। ড্রাগনের সঠিক পরিচর্যা পেলে খুব দূরতো ফল দিতে শুরু করে। ড্রাগনের পরিচর্যার বিষয়টি খুবই গুরত্বপূর্ণ। ড্রাগনের চারা রোপনের সময় যদি পরিমান মতো জৈব সার দেওয়া হয় এবং সারা বছর তার প্রয়োজন মতো পানি দেওয়া যায় তাহলে প্রথম বছরেই ড্রাগন বিক্রি করা সম্ভব। ড্রাগন খরা এবং অতিরিক্ত পানি কোনোটাই সহ্য করতে পারে না। পানি কম পরিমানে দেওয়া হলে চারার দৈহিক বৃদ্ধি কমে যায় যার ফলে ফল আসতে দেরি হয় এবং পানি বেশি পরিমান দিলে চারা গোড়া পঁচে গাছ মারা যেতে পারে। তাই বলা হয় ড্রাগন একটি সংবেদনশীল উদ্ভিদ।

চারা রোপনের পরে সব থেকে গুরত্বপূর্ণ কাজ হলো সেচ প্রদান। যেহেতু ড্রাগন গরম এবং শীত অনুভব করতে পারে না তাই সারা বছর একই পরিমান পানি প্রয়োজন হয়। বর্ষার সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে অতিরিক্ত পানি যেনো চারা গোড়ায় না থাকে সে জন্য সঠিক ভাবে নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখতে হবে। এই সেচ প্রদানের বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কৃষক ভাইয়েরা সমস্যার সম্মুখীন হন। ড্রাগনের সেচ প্রদানের সকল সমস্যার সমাধান হতে ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম বা বিন্দু বিন্দু সেচ পদ্ধতি।

ড্রিপ ইরিগেশন কি?
ড্রিপ ইরিগেশন ( Drip Irrigation ) বা বিন্দু সেচ পদ্ধতি হলো নিয়ন্ত্রিত সেচ ব্যবস্থা। এই পদ্ধতিতে গাছের গোঁড়ায় বিন্দু বিন্দু ভাবে ধীরে ধীরে পানি দেয়া যায়। তাতে পানি কম প্রয়োজন হয়। পানি ছড়িয়ে ছিটিয়ে না গিয়ে উত্তম ভাবে গাছের গোঁড়ায় পড়ে। তাছাড়া গবেষনা থেকে জানা যায় ড্রিপ সেচ পদ্ধতির মাধ্যমে ৭০-৮০% পানি অপচয় রোধ করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে সেচ প্রদানের সাথে সাথে প্রয়োজনীয় তরল সার বা লিকুইড ঔষধ গাছের গোড়ায় প্রদান করা সম্ভব। ভাসিয়ে সেচ প্রদানের ফলে জমিতে ঘাস/আগাছা জন্মানোর পরিমান বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ড্রিপ সেচ পদ্ধতির মাধ্যমে ঘাস/ আগাছা জন্মানোর হার ৮০-৮৫% কমে আসে।

অনলাইন ড্রিপ ইরিগেশন কি?
এই পদ্ধতিতে ড্রিপার নজেল গুলো আলাদা থাকে। পানির মেইন লাইন থেকে যে ১৬ এম এম ড্রিপ টিউব চলে আসে এই পাইপটি একটি পাঞ্চ টুলের মাধ্যমে ছিদ্র করে আলাদা ড্রিপার গুলো টিউবের সাথে সেট করে দেওয়া হয়। এই ড্রিপার গুলো বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে যেমনঃ- 2L/H, 4L/H বা 8L/H গাছের প্রয়োজন অনুযায়ী এই ড্রিপার গুলো বাছাই করতে হয়। আমাদের বেশি ব্যবহারিত ড্রিপারটি হচ্ছে এডজাস্টেবল ড্রিপার এটি ঘন্টায় ৭০ লিটার পর্যন্ত পানি দিতে সক্ষম। এই ড্রিপারটিকে হাত দিয়ে ঘুরিয়ে পানি দেওয়াকে কম বেশি করা যায়। মাঠ পর্যায়ের ফল বাগান সহ ছাদবাগান ইত্যাদি জায়গায় এই এডজাস্টেবল ড্রিপার ব্যবহার করা হয়।

অনলাইন ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেমের সুবিধা সমূহঃ
*পানির অপচয় হয় কম (ফ্লোডিং সেচের অর্ধেকের ও কম খরচ)
*প্রয়োজন মাফিক সেচ দেওয়ার ফলে পানি কম বেশি হওয়ার সুযোগ নেই ফলে ড্রাগন গাছের গোড়া পচার সম্ভাবনা থাকে না।
*খরার দিনে অল্প সময়ে, অল্প খরচে নিয়মিত সেচ দেওয়া যায় ফলে উৎপাদনশীলতা বাড়ে বহুগুন।
*এই সিস্টেম এ তরল সার ও সেচের পানির সাথে প্রয়োগ করা যায় যা অত্যন্ত যুগোপযোগী ও সাশ্রয়ী একটি সিস্টেম।
*অনলাইন ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম সেটাপ কম খরচেই করা যায় এবং পার্টস ও সার্ভিস সহজলভ্য।
*একবার সেটাপ করলে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়।

এই সব বিষয় বিবেচনায় অনলাইন ড্রিপ ইরিগেশন প্রযুক্তি ড্রাগন ফল চাষে একটি যুগান্তকারী সংযোজন। ড্রাগন চাষী ভাইয়েরা ড্রাগন বাগানে আজই অনলাইন ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম সংযোজন করুন অধিক লাভ ঘরে তুলুন।

YouTube player

3 thoughts on “বানিজ্যিক ড্রাগন চাষে ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম”

  1. 250 টা গাছে এই সিস্টেম করতে কত খরচ হতে পারে? গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৭ – ৮ ফিট

    Reply

Leave a Comment

Item added to cart.
0 items - ৳ 0.00